বৈশি^ক উষ্ণায়ন ও আমাদের প্রতিবেশ
- মোহাম্মদ আফতাবুজ্জামান
- ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০৫
বর্তমান যুগ শিল্পায়ন ও নগরায়ণের যুগ। বর্তমান বিশ^ ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ। এ বিশ^ ব্যবস্থায় চোখের পলকেই বিশে^র একপ্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের নজরে আসে। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে মানুষের উন্নত চিন্তা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে। এর ফলে এক দিকে আমরা যেমন উন্নত অধুনিক নগরজীবন উপভোগ করছি, তেমনই অন্য দিকে ক্ষতি হচ্ছে পৃথিবীর নানাপ্রান্তের প্রাণ ও প্রতিবেশের। বিশ^ব্যাপী আবহাওয়ার বহুরূপী প্রকাশ বৈশি^ক উষ্ণায়নের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকস্মিক বন্যা, গত বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের কালিফোর্নিয়ায় দাবানল, আফ্রিকা ও ইউরোপের অতিবৃষ্টি, এশিয়ার ক্রমশ উষ্ণতা আর বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে ঘন ঘন সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, ঝড় ও বন্যা সবকিছুই বৈশি^ক উষ্ণায়ন বা জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব প্রভাব। গত মাসে আমাদের দেশের তাপমাত্রা বিশেষ করে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে বৈশি^ক উষ্ণায়নের প্রভাব কতটা মারাত্মক হতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোটামুটি দু’ভাবে হয়ে থাকে। ১. ধীরগতি। যেমন- মরুময়তা, খরা, বন্যা ইত্যাদি এবং ২. আকস্মিক। যেমন- সাইক্লোন, কালবৈশাখী ইত্যাদি।। United Nations Environmental Program (UNEP)- Z সমীক্ষা অনুযায়ী গত শতাব্দীতে সমুদ্র স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ সেমি.। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সমুদ্র স্তর বৃদ্ধির এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশের উপকূলীয় ছোট ছোট দ্বীপগুলো সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আরো ধারণা করছেন, সমুদ্র স্তর যদি এক মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় তাহলে বাংলাদেশের ১৫% ভূমি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে এবং তিন মিলিয়ন মানুষ ব্যস্তুচ্যুত হবে। নানা কারণে বৈষ্ণিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার মধ্যে গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া, এন্টার্কটিক মহাদেশের বড় বড় হিমবাহ গলে যাওয়া ও হিমালয়ের বরফ গলা ইত্যাদি প্রধান।
বাংলাদেশে বিগত ১৫ বছরের মধ্যে ১৩টি বড় বড় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। সিডর, আম্পান, আইলা, ইয়াস, মোখা এবং ২৬ মের রেমালের ভয়াবহতা সহজেই অনুমেয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক ঢাল বা বাঁধ সুন্দরবন যদি না থাকত তাহলে প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের ক্ষতির মাত্রা কয়েক শ’ গুণ বৃদ্ধি পেত। রেমালের আঘাতে বরাবরের মতো সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের যে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে তা ২৬টি ভাসমান নিথর হরিণের মরদেহ দেখে সহজেই অনুমেয়। ২৮ মে, ২০২৪ তারিখে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকার প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩.৭৩ মিলিয়ন, প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবাদিপশু, ফসল, মাছ ও বাঁধের ক্ষতি সহজে পুষিয়ে ওঠার নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, ২.৭ মিলিয়ন শিশু রেমালের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বিশ^ব্যাপী পরিবেশ দূষণরোধ ও প্রাণ-পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ১৯৭২ সাল থেকে প্রতি বছর ‘৫ জুন’ বিশ^ পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা। এ বছর বিশ^ পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘Land restoration, desertification and drought resilience.’ আর আমাদের দেশীয় প্রতিপাদ্য হলো ‘করব ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখব মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ এবং প্রচারণার থিম ঠিক করা হয়েছে #generationrestoration। বর্তমান বিশ^ ও দেশীয় বাস্তবতায় এ প্রতিপাদ্য প্রণিধানযোগ্য। কেননা বাংলাদেশসহ বিশে^র নানা স্থানে বিবিধ কারণে কৃষিভূমি ও বনভূমি কমে যাচ্ছে, মরুময়তা ও খরা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বৈচিত্র্যময় ও বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের পাশাপাশি আমাদের আধুনিক ও বাস্তবোচিত সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলায় আমাদের লস ও ড্যামেজের হিসাবের পাশাপাশি ত্রিমাত্রিক উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন : আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টির গুরুত্ব ও ঝুঁকি বোঝানোর পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান করার জন্য আলাপ-আলোচনা ও দরকষাকষি চালিয়ে যাওয়া; জাতীয় পর্যায়ে নানামুখী উদ্যোগ যেমন, নতুন নতুন গবেষণা, স্থানিক সমাধানের কৌশল উদ্ভাবন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি; ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা, দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেয়া ইত্যাদি।
পরিশেষে বলতে চাই, বৈষ্ণিক উষ্ণায়ন এবং এর সৃষ্ট বিপর্যয় একটি বিশ্বজনীন বিষয়, তাই এর প্রতিরোধে যে উদ্যোগই নেয়া হোক না কেন তাও বিশ^জনীন নেয়া প্রয়োজন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ যদিও বেশ সফলতা লাভ করেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলার বিষয়টি আমাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ^জনীন এ সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য বৈশি^ক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় সমস্যার আশু সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। সর্বোপরি, একটি সুন্দর ধরণী গড়তে ও বৈষ্ণিক উষ্ণায়নের নেতিবাচক প্রভাব থেকে বিশ^কে বাঁচাতে উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত সব দেশ এবং জাতিকে একত্রে কাজ করতে হবে।
লেখক : পরিবেশবাদী ও উন্নয়নকর্মী
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা